বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন

আন্দোলন আরও তীব্র হবে

আন্দোলন আরও তীব্র হবে

স্বদেশ ডেস্ক:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের হারাবার কিছু নাই। আমরা পথে নেমেছি, আমরা রাস্তায় নেমে গেছি। আমরা পদযাত্রা করছি, আমরা রোড মার্চ করছি, আমরা সমাবেশ করছি, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এই আন্দোলন এখন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। সরকারকে বলব, সময় নেই, পদত্যাগ করেন।’

আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার উত্তরার পলওয়ে মার্কেট সংলগ্ন মাঠে মহানগর বিএনপির উত্তরের উদ্যোগে সরকার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।

একই দাবিতে রাজধানীর প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

রাজধানীর দুই প্রবেশদ্বারের অনুষ্ঠিত সমাবেশে জুমার নামাজের পর বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সহকারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

(ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি) 

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাদের জিজ্ঞাসা করেন, গতকাল বৃহস্পতিবার করেছে, এই আন্দোলনের দাবি যদি হাসিনা মানেন তাহলে কি করবেন? এটা হাসিনার দায়িত্ব। উনি আমাদের কী করতে চান সেটা উনি ডিসাইড করবেন। আমাদের পরিষ্কার কথা হাসিনাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে। তারেক রহমান সাহেব কী বলেছেন? যদি কথা শোনো ভালো, তা না হলে ফয়সাল হবে কোথায়? নেতাকর্মীরা এই সময়ে স্লোগান দেয় ‘রাজপথে’।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, একটাই সিদ্ধান্ত যেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) ডাক দিয়েছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য, তার ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য, সেই বাংলাদেশের মানুষের এগিয়ে আসতে হবে, বেরিয়ে আসতে হবে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণের সরকার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলব এখনও সময় আছে আপনি পদত্যাগ করুন। বাংলাদেশের মানুষকে রেহাই দেন। অনেক হত্যা-গুম-খুন হয়েছে আমরা এগুলো আর দেখতে চাই না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’

আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিবের দেওয়া বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ করে কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাদের মিথ্যা বলতে এতটুকু বাধে না।’

ঢাকা উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, শাহজাদা মিয়া, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ সোহরাব, তাবিথ আউয়াল, গাজীপুর জেলার সভাপতি ফজলুল হক মিলন, মুন্সীগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

(ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি)

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে আমাদের ৫ শতাধিক লোককে গুম করেছে। তাদের বাপ-মা-ভাই-বোন সবার চোখেমুখে প্রতিহিংসার আগুন। তারা চায়- এই সরকার এখনই পদত্যাগ করুক, তাদের সন্তান যদি ফিরে ভালো, যারা গুম করেছে তাদের বিচার করতেই হবে। যারা গুম, খুন করেছে তাদের বিচার করব। প্রশাসনের সব ডিসি-এসপিই খারাপ নয়, যারা খারাপ তাদের বিচার করা হবে। যারা অন্যায় করে অপরাধ করে তারা সবসময় ভীত থাকে। গত ১৫ বছর ধরে আমাদের কোনো অপরাধ নেই, আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। এই সরকারকে অনতিবিলম্বে আমরা পদত্যাগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ওরা বলছে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নেই। এই সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা ‘৯৬ সালে যে ক্ষমতায় আসলেন কোন সরকারের অধীনে ক্ষমতায় আসলেন? সংসদে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হল, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে গিয়ে ক্ষমতা ছাড়লেন। এখন কেন সংবিধানসহ নানা কথা বলেন? ওই সংবিধান তো কেটেকুটে নষ্ট করে দিয়েছেন। এই কাটাকাটি সংবিধানের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।’

দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশে এত টিভি, সংবাদপত্র, সাংবাদিক- থাকলে কী হবে, তাদের স্বাধীনভাবে লেখার ক্ষমতা নেই। আমাদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে যান, লিখে নিয়ে যান, অনুষ্ঠানের ছবি তুলে নিয়ে যান তারা প্রকাশ করতে পারেন না। যদি আমরা এই সরকারের পদত্যাগ করাতে পারি, যদি নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাচনের ব্যবস্থা করাতে পারি-এটা আমরা অবশ্যই করব, এটা বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা। তখনই এ দেশের মানুষ মুক্তি পাবে এবং স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকার বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু এখন ৭০-৮০ কেজি চাল খাচ্ছেন কী নির্মম পরিহাস জাতির সঙ্গে। আবার যদি নির্বাচন আসে তাহলে তারা কী বলবে? এই শেখ হাসিনা সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়। এখন যে সংসদ রয়েছে-এটি একটি ভুয়া সংসদ। এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। যে সরকার রয়েছে, তা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। কাজেই তারা গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না সেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জনগণের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে সরকার পদত্যাগ করলে কোনো লজ্জা নেই। গুলি করে, টিয়ার গ্যাস মেরে, নির্যাতন করে বাংলাদেশের মানুষকে দমন করা যাবে না। তাই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে রাজপথে আছি এবং থাকব। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আজীজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, শিরীন সুলতানা, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, ইউনূস আলী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877